কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নে প্রাকৃতিক বিভিন্ন দূর্যোগ আঘাত হানলে সবচেয়ে বেশী ক্ষয়ক্ষতি হবে এমন এলাকা সমূহের মধ্যে ইউনিয়নের সাগরঘেষা গ্রাম উত্তর গোমাতলী মোহাজের পাড়া । অতীতে ঘটে যাওয়া কয়েকটি প্রাকৃতিক দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান দেখলেই তা অনুমেয়।
কিন্তু ওই এলাকার মানুষদের দূর্যোগের আঘাত থেকে রক্ষা করতে এবং দূর্যোগকালীন ঝুঁকি কমাতে ১৯৯৩ সালে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কতৃক স্থাপিত সাইক্লোন শেল্টার এখন চরম ঝুঁকিতে আছে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র আঘাতে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে জোয়ারের পানি ভবনের পাদদেশ ঘেষে নিয়মিত চলাচল করায় সাইক্লোন শেল্টারটির নিচের মাটি এক-তৃতীয়াংশ সরে গেছে। স্থানীয় প্রসাশনের সুষ্ট তদারকির অভাবে উক্ত সাইক্লোন শেল্টারের এই অবস্থা বলে স্থানীয়দের অভিমত। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র তান্ডবে ঘরবাড়ি হারানো প্রায় ১০টি পরিবার বর্তমানেও উক্ত শেল্টারে অবস্থান করছে।
দুই যুগ আগে ১৯৯১ সালের ২৯এপ্রিলে উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়। যার নাম ছিল ‘ম্যারি এন’। ঘূর্ণিঝড়টি প্রলয়ংকরী শক্তি নিয়ে আঘাত হেনেছিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে তীব্র জলোচ্ছ্বাসে ফুঁসে ওঠা সমুদ্রের ২৫ ফুট উঁচু ঢেউয়ের ছোবলে টেকনাফ থেকে ভোলা পর্যন্ত উপকূল ভেসে যায়। ওই প্রলয়ে সরকারি হিসেবে প্রাণহানির সংখ্যা ১লাখ ৩৮হাজার বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ছিল প্রায় দ্বিগুণ। প্রাণ হারায় প্রায় ২লাখ মানুষ। গৃহহারা হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ।
এছাড়া চলতি বছরের ২১মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র আঘাতে সদর উপজেলার গোমাতলীর বিভিন্ন এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধের অংশ দিয়ে নিয়মিত জোয়ারের পানি ঢুকে। লবণাক্ত পানি ঢুকে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল, বীজতলা, চিংড়ী ঘের, লবণ মাঠ, পুকুর ও মাছ, রাস্তাঘাট ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতি হয়।
পরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় চৌফলদন্ডি স্লুইস গেইট, পোকখালী স্লুইস গেইট ও উত্তর গোমাতলী মোহাজের ঘোনা এ ব্লক, ডি ব্লক ও সি ব্লক প্রজেক্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কি.বেড়িবাঁধ জোয়ারের পানির তোড়ে বিধ্বস্থ হয়। এরপর থেকে প্রতিনিয়ত পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পশ্চিম গোমাতলী চরপাড়া অংশের একাধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিলিন হয়েছে। বর্তমানে গোমাতলীর অন্তত ৫টির অধিক গ্রামে নিয়মিত জোয়ার-ভাটা চলছে। ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ জনগণ প্রতি বর্ষায আরও একটি ২৯এপ্রিলের ছোবল আতংকে রীতিমতো তটস্থ থাকেন।
অপরদিকে উপজেলার উপকুলবর্তী বৃহত্তর গোমাতলীতে প্রায় ১৫হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস। ঐসব এলাকায় আশ্রয়ণ কেন্দ্র কাম সরকারী-বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে প্রায় ৪টি। এসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় নিতে পারে উপকূলের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। বাকীরা থাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। তাই আরো আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন ও বর্তমানে যেসব আছে তা রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবিও জানান স্থানীয়রা।
পাঠকের মতামত: